নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর গ্রামে সাত বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সৎমায়ের বিরুদ্ধে। নিহত শিশুটির নাম হাজেরা খাতুন। গত রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তবে রাত পর্যন্ত লাশ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত বিষয়টি গোপনই ছিল।
হাজেরা কুটিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা হারুন অর রশীদ পাবনার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। প্রায় এক দশক আগে হাজেরার মা দোলনা খাতুন পরিবার ছেড়ে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে চলে গেলে শিশু হাজেরা কিছুদিন মায়ের সঙ্গে থেকে পরে বাবার কাছে ফিরে আসে।
হারুন দ্বিতীয় বিয়ে করেন রুবি খাতুনকে। সেই ঘরে জন্ম নেয় যমজ দুই সন্তান—আয়মান সেখ ও সালমান সেখ। এই নতুন সংসারে সৎমায়ের সঙ্গে থাকছিল ছোট্ট হাজেরা।
স্থানীয়রা জানান, রোববার স্কুল শেষে হাজেরা বাড়ি ফিরে সোজা সৎমায়ের কাছে যায়। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। পরিবারের সদস্যরা শুরুতে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও বিকেল গড়াতেই সন্দেহ দেখা দেয়। কারণ ঘরে তালা লাগানো ছিল এবং শিশুটির কোনো খোঁজ মিলছিল না।
পরে প্রতিবেশীরা তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক বালতির মধ্যে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ উদ্ধার করেন। উপস্থিত সবার চোখ কেঁদে যায় এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, “বাচ্চাটি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সৎমায়ের ঘরে ঢুকেছিল। এরপর থেকে আর কারও চোখে পড়েনি। আমরা খোঁজ করতে গিয়ে দেখি ঘরে তালা। সন্দেহ হলে তালা ভেঙে দেখি বালতির মধ্যে বস্তায় প্যাঁচানো হাজেরার মরদেহ।”
শিশুটির ফুপু হাসি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “একটা নিষ্পাপ শিশুকে কী অপরাধে এমনভাবে হত্যা করা হলো! যদি সে ওকে রাখতে না চাইত, আমাদের বলে দিত। আমরা মাদরাসায় দিয়ে দিতাম। এই নির্মম হত্যার বিচার চাই।”
দাদি মনোয়ারা খাতুন বলেন, “আমার নাতনি কারও কোনো ক্ষতি করেনি। সে তো একটু স্নেহ আর নিরাপত্তা চেয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সৎমা রুবি খাতুন পলাতক রয়েছেন। এলাকাবাসীর দাবি, রুবির সঙ্গে হাজেরার সম্পর্ক সবসময় উত্তপ্ত ছিল, প্রায়ই শিশুটিকে মারধর করতে দেখা যেত।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কামারখন্দ সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা মরদেহটি বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি বালতির মধ্যে পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তাকে বালিশচাপা দিয়ে অথবা গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা দ্রুত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
জাহিদ/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
স্কুলফেরত শিশুকে হত্যা করে বস্তায় ভরে ঘরে তালা দিল সৎমা
- আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ১১:১৩:৪১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ১১:১৩:৪১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ