ভূমি আইন ২০২৪-এ আসছে স্মার্ট কার্ড, কঠোর শাস্তি ও শ্রেণি পরিবর্তনে নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক :আপনার নামে জমি আছে ঠিকই, কিন্তু নিয়ম করে খাজনা দিচ্ছেন না? তাহলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। কারণ, নতুন ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪’-এর খসড়ায় স্পষ্ট বলা হয়েছে—টানা তিন বছর খাজনা না দিলে জমি সরকারের খাস খতিয়ানে যুক্ত হবে।
এখন পর্যন্ত জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) আদায়ে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। তবে নতুন আইনে জমির মালিকানাকে সুনির্দিষ্ট ও আধুনিক করতে কড়া নিয়ম সংযোজন করা হচ্ছে।
তিন বছর খাজনা বাকি থাকলেই বাজেয়াপ্ত হবে জমি
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে,
একটানা তিন অর্থবছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এর মানে, জমির মালিক যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে খাজনা না দেন, তাহলে তার জমির মালিকানা বাতিল হবে এবং সরকার নিজ নামে সেটি নিবন্ধন করবে।
আসছে স্মার্ট ভূমি কার্ড (সিএলও)
নতুন আইনে প্রতিটি জমির মালিকের জন্য চালু হচ্ছে ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (CLO)’, যা এক ধরনের স্মার্ট কার্ড। এতে থাকবে:
মালিকের ইউনিক আইডি
জমির খতিয়ান ও দাগ নম্বর
কিউআর কোডসহ প্রমাণন তথ্য
এই স্মার্ট কার্ড জমির চূড়ান্ত মালিকানার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হবে এবং খাজনা, দলিল ও নামজারি—সব কাজ এই কার্ডের মাধ্যমেই হবে।
ভূমি দখল ও জালিয়াতিতে শাস্তি
আইনে জমি জালিয়াতি, ভুয়া দলিল বা জাল কাগজে দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে:
২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড
৫ লাখ টাকা জরিমানা
বা উভয় দণ্ড হতে পারে
এতে করে জমি নিয়ে জালিয়াতি ও কাগজপত্র বিকৃতি করার প্রবণতা অনেকটাই কমবে বলে মনে করছে সরকার।
কৃষিজমি রক্ষায় নতুন বিধান
আইনে বলা হয়েছে:
সরকার তিন ফসলি বা দুই ফসলি কৃষিজমি উন্নয়নের জন্য অধিগ্রহণ করতে পারবে না
তবে যদি বিশেষ অনুমোদন থাকে, তখনই সেটা সম্ভব
অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনুর্বর জমি আগে বিবেচনা করতে হবে
এতে ফসলি জমির অনাকাঙ্ক্ষিত রূপান্তর কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জমির শ্রেণি পরিবর্তনে নিয়ন্ত্রণ
সরকারের অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবেন না
তবে এক বিঘা পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি এই নিয়মের বাইরে থাকবে
আইন লঙ্ঘন করলে—
এক বছরের কারাদণ্ড
অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
স্যাটেলাইট চিত্রে ভূমির মানচিত্র
ভূমির ব্যবহার ও শ্রেণি নির্ধারণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় জানায়, তৈরি করা হবে স্যাটেলাইট চিত্রভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ, যেখানে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত থাকবে—
আবাসিক এলাকা
বাণিজ্যিক এলাকা
কৃষি জমি
বনভূমি
জলাশয় ইত্যাদি
জমির হস্তান্তরে নামজারি ও কার্ড হালনাগাদ বাধ্যতামূলক
জমি বিক্রয় বা উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরের পর নতুন মালিককে:
নামজারি করতে হবে
সিএলও স্মার্ট কার্ড হালনাগাদ করতে হবে
এই কাজে নির্ধারিত ফি দিতে হবে
বর্তমান প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির জন্য খাজনা দিতে হয় না, তবে দাখিলা সংগ্রহ (১০ টাকা) বাধ্যতামূলক।
অনেকে দাখিলা না নিয়ে জমির মালিকানা দাবী করেন, যা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি করে। নতুন আইনে এসব অব্যবস্থা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকার যা বলছে
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান:
“জমি সংক্রান্ত অনিয়ম ও জালিয়াতি রোধে এটা হবে ঐতিহাসিক পরিবর্তন। এই আইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা আরও নিরাপদ, খাজনা আদায় কার্যকর ও ভূমি ব্যবস্থাপনা হবে ডিজিটাল।”
নতুন ভূমি আইন বাস্তবায়িত হলে খাজনা বাকি রাখা মানে শুধু জরিমানা নয়, জমির মালিকানাও হারানোর শঙ্কা।
তাই জমির মালিকদের উচিত এখন থেকেই সচেতন হওয়া—নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করুন, দাখিলা সংগ্রহ করুন, স্মার্ট ভূমি কার্ড হালনাগাদ রাখুন।
FAQ (এক লাইনে):
প্রশ্ন: খাজনা না দিলে জমির কী হবে?
উত্তর: তিন বছর বকেয়া থাকলে জমি খাস খতিয়ানে চলে যাবে।
প্রশ্ন: স্মার্ট ভূমি কার্ড কী?
উত্তর: জমির মালিকানা সনদ যা QR কোডসহ ডিজিটাল রেকর্ড রাখবে।
প্রশ্ন: জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে কী শাস্তি হবে?
উত্তর: এক বছর জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
আল-মামুন/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
ভূমি খাজনা না দিলে জমি যাবে খাস খতিয়ানে, জানুন বিস্তারিত
- আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৯:৫৩:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৯:৫৩:০৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ