
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে খারিজ সাইফের আবেদন, শত্রু সম্পত্তি আইনে সরকারের পক্ষে রায়
নিজস্ব প্রতিবেদক: বলিউড অভিনেতা ও পতৌদি পরিবারের উত্তরাধিকারী সাইফ আলি খান বড় এক ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ে তিনি ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকার হারাতে চলেছেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এই ঐতিহাসিক সম্পত্তি এখন ভারতের ‘শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮’-এর আওতায় সরকারের দখলে যেতে চলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত: এক সিদ্ধান্ত বদলে দিল ইতিহাস
২০১৪ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘোষণা দেয়, ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের সম্পত্তি ‘এনেমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট’-এর আওতায় পড়বে। কারণ, তার বড় মেয়ে আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানে বসবাস শুরু করেন। ভারত সরকারের মতে, তার নামে থাকা সম্পত্তি তাই শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ২০১৫ সালে সাইফ আলি খান হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। তার দাবি, হামিদুল্লাহ খানের মেজ মেয়ে সাজিদা সুলতান ভারতের নাগরিক ছিলেন এবং তিনি ছিলেন সেই সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকারী। সাজিদা হলেন সাইফের নানি। অর্থাৎ, তিনি নিজেও সেই সম্পত্তির আইনত উত্তরসূরি।
আদালতের রায়: স্থগিতাদেশ উঠে গিয়ে সরকার পেল ছাড়পত্র
প্রায় এক দশক ধরে মামলাটি চলছিল। ২০১৯ সালে আদালত জানান দেয়, সাজিদা সুলতান বৈধ উত্তরাধিকারী। কিন্তু সরকার পক্ষের যুক্তি ছিল, সম্পত্তির একাংশ আবিদার নামে থাকায় পুরো সম্পত্তিই শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচ্য।
২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর, আদালত সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়, যা এতদিন সরকারের দখল প্রক্রিয়া আটকে রেখেছিল। এরপর ২০২৫ সালের জুলাই মাসে, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সাইফের আবেদন সম্পূর্ণ খারিজ করে দেয়।
শত্রু সম্পত্তি আইন কী?
১৯৬৮ সালে প্রণীত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ অনুসারে, যারা দেশভাগের সময় বা পরবর্তীতে পাকিস্তান বা চীনে চলে গেছেন, তাদের ভারতে থাকা সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে। এই আইনের আওতায় বর্তমানে দেশজুড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কী রয়েছে সাইফের হারানো সম্পত্তিতে?
এই বিতর্কিত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে:
ভোপালের রাজপ্রাসাদ
কয়েকশ একর জমি
ঐতিহাসিক ভবন ও প্রাসাদ
বনভূমি ও জমিদারির অংশবিশেষ
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, এই সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
সামনে কী করতে পারেন সাইফ?
এই রায় সাইফের জন্য এক বিরাট বিপর্যয় হলেও, তার সামনে এখনো সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে। তিনি চাইলে এই রায় চ্যালেঞ্জ করে চূড়ান্ত আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন।
তবে আপাতত, একটি ঐতিহাসিক রাজবংশের উত্তরাধিকারী হয়েও সাইফ আলি খানকে নিজের নবাবি সম্পত্তি হারানোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
একদিকে বলিউডের ক্যামেরার ঝলকানি, অন্যদিকে বাস্তব জীবনে রাজ্য হারানোর শোক—সাইফ আলি খানের জন্য ২০২৫ সাল নিঃসন্দেহে এক কঠিন অধ্যায় হয়ে থাকল। উত্তরাধিকার, আইন, ইতিহাস এবং রাজনীতি মিলিয়ে এই কাহিনি হয়ে উঠেছে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
ঝর্ণা/